ঢাকা , শনিবার, ১১ জানুয়ারী ২০২৫ , ২৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ |

এমপি আজীম হত্যাকাণ্ড

লাশ শনাক্তের উদ্যোগ নেই, তদন্ত নিয়ে প্রশ্ন!

আপলোড সময় : ২০-০৬-২০২৪ ১১:৪০:১৩ পূর্বাহ্ন
আপডেট সময় : ২০-০৬-২০২৪ ১১:৪০:১৩ পূর্বাহ্ন
লাশ শনাক্তের উদ্যোগ নেই, তদন্ত নিয়ে প্রশ্ন! সংগৃহীত
এখন পর্যন্ত এমপি আনোয়ারুল আজীম আনারের লাশ শনাক্ত করার কোনো উদ্যোগই নেওয়া হয়নি? অথচ প্রতিদিনই মিডিয়ায় এই হত্যাকাণ্ড নিয়ে পুলিশ কর্মকর্তারা নানা ধরনের বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন। কয়েক জন আসামি ইতিমধ্যে আদালতে হত্যাকাণ্ডে নিজেদের সম্পৃক্ত করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছেন।

কলকাতার ঐ ফ্ল্যাটের সেফটি ট্যাংক থেকে উদ্ধার হওয়া মাংসের টুকরো বা খাল থেকে উদ্ধার করা হাড়ের এখনো ফরেনসিক পরীক্ষা করা হয়নি। প্রাথমিক পরীক্ষায় ঐ হাড় ও মাংস মানুষের বলে নিশ্চিত হওয়া গেলেও সেটি কার তা এখনো নিশ্চিত নয়। আনারের মেয়ে ডরিনের ভারতের ভিসা হলেও ডিএনএ টেস্টের জন্য তাকে ভারতে নেওয়ার উদ্যোগও নেওয়া হয়নি। ফলে এ হত্যাকাণ্ড নিয়ে যে তদন্ত হচ্ছে সেটা নিয়ে প্রশ্নের তৈরি হয়েছে।

ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, লাশ শনাক্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত এসব তদন্ত কোনো কাজেই আসবে না। সর্বপ্রথম প্রয়োজন ছিল, লাশ শনাক্ত করার। যে ফ্ল্যাটে আনারকে হত্যা করা হয়েছে, ঐ ফ্ল্যাটটি আগেই ফরেনসিক পরীক্ষা করার প্রয়োজন ছিল। কারণ ঐ ফ্ল্যাটের মধ্যে খুনিরা অবশ্যই কোনো না কোনো আলামত রেখে গেছে। এমনকি যে বালিশ চাপা দিয়ে আনারকে শ্বাসরোধ করা হয়েছে, সেটিও আলামত হিসেবে রাখার প্রয়োজন ছিল।

এশিয়া মহাদেশের প্রখ্যাত ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. মোজাহেরুল হক বলেন, ‘এই হত্যাকাণ্ডের খবর জানার পর প্রথম কাজ ছিল, রুমটিকে ফরেনসিকের মধ্যে নিয়ে নেওয়া। ঐ রুমের প্রতিটি কোনায় কোনায় পরীক্ষা করা। সেখানে খুনিদের পায়ের ছাপ ছিল, নানা ধরনের আলামত খুনিরা নিশ্চয় রেখে গেছে। কিন্তু সেসব আলামত রাখা হয়েছে কি না আমরা জানি না। এ ধরনের হত্যাকাণ্ডের তদন্তে লাশ শনাক্ত করাই হলো প্রধান কাজ। সেটি না করে অন্য তদন্ত আদালতে কাজে আসবে না। আগে লাশটি শনাক্ত করতে হবে। তখন আপনি নিশ্চিত হবেন, হ্যাঁ, তিনি খুন হয়েছেন। এরপর তদন্ত করতে হবে।’ 

হত্যাকাণ্ডের এক যুগেরও বেশি সময় পার হয়ে গেলেও এখন খুনিরা শনাক্ত হয়নি। ফলে শুরু করা যায়নি বিচারকাজ। একইভাবে আনারের লাশ শনাক্ত না হলে এর বিচার করা যাবে না। কলকাতা সিআইডি এ হত্যাকাণ্ড নিয়ে কোনো কথাই বলছে না। তারা যে মাংস বা হাড় উদ্ধার করেছে, সেটা আনারের কি না এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। সে উদ্যোগটাও এখন পর্যন্ত নেওয়া হয়নি। আনারের মেয়ে ডরিন ইতিমধ্যে এ হত্যা মামলা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। সঠিকপথে এগোচ্ছে কি না সেটাও তার প্রশ্ন।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, স্বর্ণ চোরাচালান থেকে এখন রাজনৈতিক দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে মামলাটির তদন্ত। প্রথমে বলা হলো, যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী আকতারুজ্জামান শাহীন এই হত্যাকাণ্ডের মাস্টারমাইন্ড। এখন বলা হচ্ছে, ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টু এ হত্যাকাণ্ডের মাস্টারমাইন্ড।

প্রশ্ন উঠেছে আসল মাস্টারমাইন্ড কে? চোরাচালানের গডফাদারদের বাঁচানোর চেষ্টা করা হচ্ছে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। ডিবির এক জন কর্মকর্তা জানান, দক্ষিণাঞ্চলের এখন উঠতি রাজনীতিবিদ, যিনি এবারের নির্বাচনে এমপি হয়েছেন তার সঙ্গে সাইদুল করিম মিন্টুর ঘনিষ্ঠতা ছিল। একাধিক বার তিনি মিন্টুর বাসায় গেছেন। চোরাচালানের সঙ্গে ঐ নব্য এমপিরও সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যাচ্ছে। এগুলোও তদন্তে আসছে। 

ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সঠিকভাবে ফরেনসিকের জিনিস সংরক্ষণ করা গেলে দীর্ঘদিন পরও লাশ শনাক্ত করা সম্ভব। একটি চুল দিয়েও সেটা সম্ভব। হাড় দিয়েও সম্ভব। তবে মাংস বেশি দিন থাকলে নষ্ট হয়ে যায়। রাশিয়ার রাজা ১৯১৭ সালে মারা যাওয়ার পর ১৯৯০ সালে তার লাশ শনাক্ত হয়েছে।

চুল ও হাড় দিয়ে এটা নিশ্চিত হওয়া গেছে। অথচ আনারের মেয়েকে কলকাতায় নেওয়া হচ্ছে না ডিএনএ টেস্টের জন্য। আনারের নির্বাচনি এলাকার লোকজনও বলছে, এর পেছনে যারা জড়িত তারা অত্যন্ত প্রভাবশালী। ফলে কোনোদিনও এর বিচার হবে কি না তা নিয়ে সন্দিহান তারা। ফলে যত দিন যাচ্ছে তদন্ত প্রক্রিয়া ততই প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে।

নিউজটি আপডেট করেছেন : Monir Hossain

কমেন্ট বক্স

প্রতিবেদকের তথ্য

এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ